Friday, February 18, 2011

 ক্ষুধার্ত থেকো, বোকা থেকো

স্টিভ জবস বিশ্বখ্যাত কম্পিউটার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান অ্যাপল ও অ্যানিমেশন স্টুডিও পিক্সারের (টয় স্টোরি, ফাইন্ডিং নিমো, মনস্টার ইনকরপোরেটেড, ওয়াল-ই, আপ-এর মতো অসাধারণ অ্যানিমেশন তৈরি করেছেন) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন বক্তা হিসেবে ২০০৫ সালে আমন্ত্রিত হয়েছিলেন স্টিভ জবস। সে বছর ১২ জুন এক ঝাঁক তরুণ মেধাবী শিক্ষার্থীর সেই সমাবর্তন অনুষ্ঠানে যে ভাষণটি তিনি দিয়েছিলেন, সেটি সত্যিই অসাধারণ।
‘প্রথমেই একটা সত্য কথা বলে নিই। আমি কখনোই বিশ্ববিদ্যালয় পাস করিনি। তাই সমাবর্তন জিনিসটাতেও আমার কখনো কোনো দিন উপস্থিত হওয়ার প্রয়োজন পড়েনি। এর চেয়ে বড় সত্য কথা হলো, আজকেই কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠান সবচেয়ে কাছে থেকে দেখছি আমি। তাই বিশ্বের অন্যতম সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই সমাবর্তন অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পেরে নিজেকে অত্যন্ত সম্মানিত বোধ করছি। কোনো কথার ফুলঝুরি নয় আজ, স্রেফ তিনটা গল্প বলব আমি তোমাদের। এর বাইরে কিছু নয়।
আমার প্রথম গল্পটি কিছু বিচ্ছিন্ন বিন্দুকে এক সুতায় বেঁধে ফেলার গল্প।
ভর্তি হওয়ার ছয় মাসের মাথাতেই রিড কলেজে পড়ালেখায় ক্ষ্যান্ত দিই আমি। যদিও এর পরও সেখানে আমি প্রায় দেড় বছর ছিলাম, কিন্তু সেটাকে পড়ালেখা নিয়ে থাকা বলে না। আচ্ছা, কেন আমি বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়লাম? এর শুরু আসলে আমার জন্মেরও আগে। আমার আসল মা ছিলেন একজন অবিবাহিত তরুণী। তিনি তখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছেন। আমার ভরণ-পোষণের দায়িত্ব নেওয়া তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়। তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, আমাকে এমন কারও কাছে দত্তক দেবেন, যাঁদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি আছে। সিদ্ধান্ত হলো এক আইনজীবী ও তাঁর স্ত্রী আমাকে দত্তক নেবেন। কিন্তু একদম শেষ মুহূর্তে দেখা গেল, ওই দম্পতির কারোরই বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি নেই, বিশেষ করে আইনজীবী ভদ্রলোক কখনো হাইস্কুলের গণ্ডিই পেরোতে পারেননি। আমার মা তো আর কাগজপত্রে সই করতে রাজি হন না। অনেক ঘটনার পর ওই দম্পতি প্রতিজ্ঞা করলেন, তাঁরা আমাকে অবশ্যই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াবেন, তখন মায়ের মন একটু গলল। তিনি কাগজে সই করে আমাকে তাঁদের হাতে তুলে দিলেন। এর ১৭ বছর পরের ঘটনা। তাঁরা আমাকে সত্যি সত্যিই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করিয়েছিলেন। কিন্তু আমি বোকার মতো বেছে নিয়েছিলাম এমন এক বিশ্ববিদ্যালয়, যার পড়ালেখার খরচ প্রায় তোমাদের এই স্ট্যানফোর্ডের সমান। আমার দরিদ্র মা-বাবার সব জমানো টাকা আমার পড়ালেখার পেছনে চলে যাচ্ছিল। ছয় মাসের মাথাতেই আমি বুঝলাম, এর কোনো মানে হয় না। জীবনে কী করতে চাই, সে ব্যাপারে আমার কোনো ধারণা নেই এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ালেখা এ ব্যাপারে কীভাবে সাহায্য করবে, সেটাও বুঝতে পারছিলাম না। অথচ মা-বাবার সারা জীবনের জমানো সব টাকা এই অর্থহীন পড়ালেখার পেছনে আমি ব্যয় করছিলাম। তাই আমি বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিলাম এবং মনে হলো যে এবার সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে। সিদ্ধান্তটা ভয়াবহ মনে হলেও এখন আমি যখন পেছন ফিরে তাকাই, তখন মনে হয়, এটা আমার জীবনের অন্যতম সেরা সিদ্ধান্ত ছিল। বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আমি ডিগ্রির জন্য দরকারি কিন্তু আমার অপছন্দের কোর্সগুলো নেওয়া বন্ধ করে দিতে পারলাম, কোনো বাধ্যবাধকতা থাকল না, আমি আমার আগ্রহের বিষয়গুলো খুঁজে নিতে লাগলাম। পুরো ব্যাপারটিকে কোনোভাবেই রোমান্টিক বলা যাবে না। আমার কোনো রুম ছিল না, বন্ধুদের রুমের ফ্লোরে ঘুমোতাম। ব্যবহূত কোকের বোতল ফেরত দিয়ে আমি পাঁচ সেন্ট করে কামাই করতাম, যেটা দিয়ে খাবার কিনতাম। প্রতি রোববার রাতে আমি সাত মাইল হেঁটে হরেকৃষ্ণ মন্দিরে যেতাম শুধু একবেলা ভালো খাবার খাওয়ার জন্য। এটা আমার খুবই ভালো লাগত। এই ভালো লাগাটাই ছিল গুরুত্বপূর্ণ। রিড কলেজে সম্ভবত দেশে সেরা ক্যালিগ্রাফি শেখানো হতো সে সময়। ক্যাম্পাসে সাঁটা পোস্টারসহ সবকিছুই করা হতো চমত্কার হাতের লেখা দিয়ে। আমি যেহেতু আর স্বাভাবিক পড়ালেখার মাঝে ছিলাম না, তাই যে কোনো কোর্সই চাইলে নিতে পারতাম। আমি ক্যালিগ্রাফি কোর্সে ভর্তি হয়ে গেলাম। সেরিফ ও স্যান সেরিফের বিভিন্ন অক্ষরের মধ্যে স্পেস কমানো-বাড়ানো শিখলাম, ভালো টাইপোগ্রাফি কীভাবে করতে হয়, সেটা শিখলাম। ব্যাপারটা ছিল সত্যিই দারুণ সুন্দর, ঐতিহাসিক, বিজ্ঞানের ধরাছোঁয়ার বাইরের একটা আর্ট। আমি এর মধ্যে মজা খুঁজে পেলাম। এ ক্যালিগ্রাফি জিনিসটা কোনো দিন বাস্তবজীবনে আমার কাজে আসবে—এটা কখনো ভাবিনি। কিন্তু ১০ বছর পর আমরা যখন আমাদের প্রথম ম্যাকিন্টোস কম্পিউটার ডিজাইন করি, তখন এর পুরো ব্যাপারটাই আমার কাজে লাগল। ওটাই ছিল প্রথম কম্পিউটার, যেটায় চমত্কার টাইপোগ্রাফির ব্যবহার ছিল। আমি যদি সেই ক্যালিগ্রাফি কোর্সটা না নিতাম, তাহলে ম্যাক কম্পিউটারে কখনো নানা রকম অক্ষর (টাইপফেইস) এবং আনুপাতিক দূরত্বের অক্ষর থাকত না। আর যেহেতু উইন্ডোজ ম্যাকের এই ফন্ট সরাসরি নকল করেছে, তাই বলা যায়, কোনো কম্পিউটারেই এ ধরনের ফন্ট থাকত না। আমি যদি বিশ্ববিদ্যালয় না ছাড়তাম, তাহলে আমি কখনোই ওই ক্যালিগ্রাফি কোর্সে ভর্তি হতাম না এবং কম্পিউটারে হয়তো কখনো এত সুন্দর ফন্ট থাকত না। অবশ্য বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকা অবস্থায় এসব বিচ্ছিন্ন ঘটনাকে এক সুতায় বাঁধা অসম্ভব ছিল, কিন্তু ১০ বছর পর পেছনে তাকালে এটা ছিল খুবই পরিষ্কার একটা বিষয়।
আবার তুমি কখনোই ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে বিচ্ছিন্ন ঘটনাগুলোকে এক সুতায় বাঁধতে পারবে না। এটা কেবল পেছনে তাকিয়েই সম্ভব। অতএব, তোমাকে বিশ্বাস করতেই হবে, বিচ্ছিন্ন ঘটনাগুলো একসময় ভবিষ্যতে গিয়ে একটা অর্থবহ জিনিসে পরিণত হবেই। তোমার ভাগ্য, জীবন, কর্ম, কিছু না কিছু একটার ওপর তোমাকে বিশ্বাস রাখতেই হবে। এটা কখনোই আমাকে ব্যর্থ করেনি, বরং উল্টোটা করেছে।
আমার দ্বিতীয় গল্পটি ভালোবাসা আর হারানোর গল্প।
আমি খুব ভাগ্যবান ছিলাম। কারণ, জীবনের শুরুতেই আমি যা করতে ভালোবাসি, তা খুঁজে পেয়েছিলাম। আমার বয়স যখন ২০, তখন আমি আর ওজ দুজনে মিলে আমাদের বাড়ির গ্যারেজে অ্যাপল কোম্পানি শুরু করেছিলাম। আমরা পরিশ্রম করেছিলাম ফাটাফাটি, তাই তো দুজনের সেই কোম্পানি ১০ বছরের মাথায় চার হাজার কর্মচারীর দুই বিলিয়ন ডলারের কোম্পানিতে পরিণত হয়। আমার বয়স যখন ৩০, তখন আমরা আমাদের সেরা কম্পিউটার ম্যাকিন্টোস বাজারে ছেড়েছি। এর ঠিক এক বছর পরের ঘটনা। আমি অ্যাপল থেকে চাকরিচ্যুত হই। যে কোম্পানির মালিক তুমি নিজে, সেই কোম্পানি থেকে কীভাবে তোমার চাকরি চলে যায়? মজার হলেও আমার ক্ষেত্রে সেটা ঘটেছিল। প্রতিষ্ঠান হিসেবে অ্যাপল যখন বড় হতে লাগল, তখন কোম্পানিটি ভালোভাবে চালানোর জন্য এমন একজনকে নিয়োগ দিলাম, যে আমার সঙ্গে কাজ করবে। এক বছর ঠিকঠাকমতো কাটলেও এর পর থেকে তার সঙ্গে আমার মতের অমিল হতে শুরু করল। প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদ তার পক্ষ নিলে আমি অ্যাপল থেকে বহিষ্কৃত হলাম। এবং সেটা ছিল খুব ঢাকঢোল পিটিয়েই। তোমরা বুঝতেই পারছ, ঘটনাটা আমার জন্য কেমন হতাশার ছিল। আমি সারা জীবন যে জিনিসটার পেছনে খেটেছি, সেটাই আর আমার রইল না।
সত্যিই এর পরের কয়েক মাস আমি দিশেহারা অবস্থায় ছিলাম। আমি ডেভিড প্যাকার্ড ও বব নয়েসের সঙ্গে দেখা করে পুরো ব্যাপারটার জন্য ক্ষমা চাইলাম। আমাকে তখন সবাই চিনত, তাই এই চাপ আমি আর নিতে পারছিলাম না। মনে হতো, ভ্যালি ছেড়ে পালিয়ে যাই। কিন্তু সেই সঙ্গে আরেকটা জিনিস আমি বুঝতে পারলাম, আমি যা করছিলাম, সেটাই আমি সবচেয়ে বেশি ভালোবাসি। চাকরিচ্যুতির কারণে কাজের প্রতি আমার ভালোবাসা এক বিন্দুও কমেনি। তাই আমি আবার একেবারে গোড়া থেকে শুরু করার সিদ্ধান্ত নিলাম। প্রথমে মনে না হলেও পরে আবিষ্কার করলাম, অ্যাপল থেকে চাকরিচ্যুতিটা ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে ভালো ঘটনা। আমি অনেকটা নির্ভার হয়ে গেলাম, কোনো চাপ নেই, সফল হওয়ার জন্য বাড়াবাড়ি রকমের কৌশল নিয়ে ভাবার অবকাশ নেই। আমি প্রবেশ করলাম আমার জীবনের সবচেয়ে সৃজনশীল অংশে। পরবর্তী পাঁচ বছরে নেক্সট ও পিক্সার নামের দুটো কোম্পানি শুরু করি আমি, আর প্রেমে পড়ি এক অসাধারণ মেয়ের, যাকে পরে বিয়ে করি। পিক্সার থেকে আমরা পৃথিবীর প্রথম কম্পিউটার অ্যানিমেশন ছবি টয় স্টোরি তৈরি করি, আর এখন তো পিক্সারকে সবাই চেনে। পৃথিবীর সবচেয়ে সফল অ্যানিমেশন স্টুডিও। এরপর ঘটে কিছু চমকপ্রদ ঘটনা। অ্যাপল নেক্সটকে কিনে নেয় এবং আমি অ্যাপলে ফিরে আসি। আর লরেনের সঙ্গে চলতে থাকে আমার চমত্কার সংসার জীবন। আমি মোটামুটি নিশ্চিত, এগুলোর কিছুই ঘটত না, যদি না অ্যাপল থেকে আমি চাকরিচ্যুত হতাম। এটা ছিল খুব বাজে, তেতো একটা ওষুধ আমার জন্য, কিন্তু দরকারি। কখনো কখনো জীবন তোমাকে ইটপাটকেল মারবে, কিন্তু বিশ্বাস হারিয়ো না। আমি নিশ্চিত, যে জিনিসটা আমাকে সামনে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিল সেটা হচ্ছে, আমি যে কাজটি করছিলাম, সেটাকে আমি অনেক ভালোবাসতাম। তোমাকে অবশ্যই তোমার ভালোবাসার কাজটি খুঁজে পেতে হবে, ঠিক যেভাবে তুমি তোমার ভালোবাসার মানুষটিকে খুঁজে বের করো। তোমার জীবনের একটা বিরাট অংশজুড়ে থাকবে তোমার কাজ, তাই জীবন নিয়ে সত্যিকারের সন্তুষ্ট হওয়ার একমাত্র উপায় হচ্ছে এমন কাজ করা, যে কাজ সম্পর্কে তোমার ধারণা, এটা একটা অসাধারণ কাজ। আর কোনো কাজ তখনই অসাধারণ মনে হবে, যখন তুমি তোমার কাজটিকে ভালোবাসবে। যদি এখনো তোমার ভালোবাসার কাজ খুঁজে না পাও, তাহলে খুঁজতে থাকো। অন্য কোথাও স্থায়ী হয়ে যেয়ো না। তোমার মনই তোমাকে বলে দেবে, যখন তুমি তোমার ভালোবাসার কাজটি খুঁজে পাবে। যেকোনো ভালো সম্পর্কের মতোই, তোমার কাজটি যতই তুমি করতে থাকবে, সময় যাবে, ততই ভালো লাগবে। সুতরাং খুঁজতে থাকো, যতক্ষণ না ভালোবাসার কাজটি পাচ্ছ। অন্য কোনোখানে নিজেকে স্থায়ী করে ফেলো না।
আমার শেষ গল্পটির বিষয় মৃত্যু।
আমার বয়স যখন ১৭ ছিল, তখন আমি একটা উদ্ধৃতি পড়েছিলাম—‘তুুমি যদি প্রতিটি দিনকেই তোমার জীবনের শেষ দিন ভাব, তাহলে একদিন তুমি সত্যি সত্যিই সঠিক হবে।’ এ কথাটা আমার মনে গভীরভাবে রেখাপাত করেছিল এবং সেই থেকে গত ৩৩ বছর আমি প্রতিদিন সকালে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে জিজ্ঞেস করি—আজ যদি আমার জীবনের শেষ দিন হতো, তাহলে আমি কি যা যা করতে যাচ্ছি, আজ তা-ই করতাম, নাকি অন্য কিছু করতাম? যখনই এ প্রশ্নের উত্তর একসঙ্গে কয়েক দিন ‘না’ হতো, আমি বুঝতাম, আমার কিছু একটা পরিবর্তন করতে হবে। পৃথিবী ছেড়ে আমাকে একদিন চলে যেতে হবে, এ জিনিসটা মাথায় রাখার ব্যাপারটাই জীবনে আমাকে বড় বড় সব সিদ্ধান্ত নিতে সবচেয়ে বেশি সাহায্য করেছে। কারণ, প্রায় সবকিছুই যেমন, সব অতি প্রত্যাশা, সব গর্ব, সব লাজলজ্জা আর ব্যর্থতার গ্লানি—মৃত্যুর মুখে হঠাত্ করে সব নেই হয়ে যায়, টিকে থাকে শুধু সেটাই, যা সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ। তোমার কিছু হারানোর আছে—আমার জানা মতে, এ চিন্তা দূর করার সবচেয়ে সহজ উপায় হচ্ছে, সব সময় মনে রাখা যে একদিন তুমি মরে যাবে। তুমি খোলা বইয়ের মতো উন্মুক্ত হয়েই আছ। তাহলে কেন তুমি সেই পথে যাবে না, যে পথে তোমার মন যেতে বলছে তোমাকে? প্রায় এক বছর আগের এক সকালে আমার ক্যানসার ধরা পড়ে। ডাক্তারদের ভাষ্যমতে, এর থেকে মুক্তির কোনো উপায় নেই আমার। প্রায় নিশ্চিতভাবে অনারোগ্য এই ক্যানসারের কারণে তাঁরা আমার আয়ু বেঁধে দিলেন তিন থেকে ছয় মাস। উপদেশ দিলেন বাসায় ফিরে যেতে। যেটার সোজাসাপটা মানে দাঁড়ায়, বাসায় গিয়ে মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত হও। এমনভাবে জিনিসটাকে ম্যানেজ করো, যাতে পরিবারের সবার জন্য বিষয়টা যথাসম্ভব কম বেদনাদায়ক হয়। সারা দিন পর সন্ধ্যায় আমার একটা বায়োপসি হলো। তাঁরা আমার গলার ভেতর দিয়ে একটা এন্ডোস্কোপ নামিয়ে দিয়ে পেটের ভেতর দিয়ে গিয়ে টিউমার থেকে সুঁই দিয়ে কিছু কোষ নিয়ে এলেন। আমাকে অজ্ঞান করে রেখেছিলেন, তাই কিছুই দেখিনি। কিন্তু আমার স্ত্রী পরে আমাকে বলেছিল, চিকিত্সকেরা যখন এন্ডোস্কোপি থেকে পাওয়া কোষগুলো মাইক্রোস্কোপের নিচে রেখে পরীক্ষা করা শুরু করলেন, তখন তাঁরা কাঁদতে শুরু করেছিলেন। কারণ, আমার ক্যানসার এখন যে অবস্থায় আছে, তা সার্জারির মাধ্যমে চিকিত্সা সম্ভব। আমার সেই সার্জারি হয়েছিল এবং দেখতেই পাচ্ছ, এখন আমি সুস্থ। কেউই মরতে চায় না। এমনকি যারা স্বর্গে যেতে চায়, তারাও সেখানে যাওয়ার জন্য তাড়াতাড়ি মরতে চায় না। কিন্তু মৃত্যুই আমাদের গন্তব্য। এখনো পর্যন্ত কেউ এটা থেকে বাঁচতে পারেনি। এমনই তো হওয়ার কথা। কারণ, মৃত্যুই সম্ভবত জীবনের অন্যতম প্রধান আবিষ্কার। এটা জীবনের পরিবর্তনের এজেন্ট। মৃত্যু পুরোনোকে ঝেড়ে ফেলে ‘এসেছে নতুন শিশু’র জন্য জায়গা করে দেয়। এই মুহূর্তে তোমরা হচ্ছ নতুন, কিন্তু খুব বেশি দিন দূরে নয়, যেদিন তোমরা পুরোনো হয়ে যাবে এবং তোমাদের ঝেড়ে ফেলে দেওয়া হবে। আমার অতি নাটুকেপনার জন্য দুঃখিত, কিন্তু এটাই আসল সত্য। তোমাদের সময় সীমিত। কাজেই কোনো মতবাদের ফাঁদে পড়ে, অর্থাত্ অন্য কারও চিন্তাভাবনার ফাঁদে পড়ে অন্য কারও জীবনযাপন করে নিজের সময় নষ্ট কোরো না। যাদের মতবাদে তুমি নিজের জীবন চালাতে চাচ্ছ, তারা কিন্তু অন্যের মতবাদে চলেনি, নিজের মতবাদেই চলেছে। তোমার নিজের ভেতরের কণ্ঠকে অন্যদের শেকলে শৃঙ্খলিত করো না। আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথা হলো, নিজের মন আর ইনটুইশনের মাধ্যমে নিজেকে চালানোর সাহস রাখবে। ওরা যেভাবেই হোক, এরই মধ্যে জেনে ফেলেছে, তুমি আসলে কী হতে চাও। এ ছাড়া আর যা বাকি থাকে, সবই খুব গৌণ ব্যাপার। আমি যখন তরুণ ছিলাম, তখন দি হোল আর্থ ক্যাটালগ নামের অসাধারণ একটা পত্রিকা প্রকাশিত হতো; যেটা কিনা ছিল আমাদের প্রজন্মের বাইবেল। এটা বের করতেন স্টুয়ার্ড ব্র্যান্ড নামের এক ভদ্রলোক। তিনি তাঁর কবিত্ব দিয়ে পত্রিকাটিকে জীবন্ত করে তুলেছিলেন। স্টুয়ার্ট ও তাঁর টিম পত্রিকাটির অনেক সংখ্যা বের করেছিল। সত্তরের দশকের মাঝামাঝি সময়ে, আমার বয়স যখন ঠিক তোমাদের বয়সের কাছাকাছি, তখন পত্রিকাটির শেষ সংখ্যা প্রকাশিত হয়। বিদায়ী সেই সংখ্যার শেষ পাতায় ছিল একটা ভোরের ছবি। তার নিচে লেখা ছিল—ক্ষুধার্ত থেকো, বোকা থেকো। এটা ছিল তাদের বিদায়কালের বার্তা। ক্ষুধার্ত থেকো, বোকা থেকো। এবং আমি নিজেও সব সময় এটা মেনে চলার চেষ্টা করেছি। আজ তোমরা যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডি ছেড়ে আরও বড়, নতুন একটা জীবনে প্রবেশ করতে যাচ্ছ, আমি তোমাদেরও এটা মেনে চলার আহ্বান জানাচ্ছি।
ক্ষুধার্ত থেকো, বোকা থেকো।`

Thursday, February 17, 2011

খেলতে খেলতে লেখাপড়া

নাঈমুর রহমান, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম, আল শাহরিয়ার, শাহাদাত হোসেন।
নামগুলো চেনা চেনা লাগছে কি? কেন লেখার শুরুতেই এই নামগুলো এল—এই প্রশ্ন করলে যে কেউ বলবেন, আরে! এরা তো আমাদের জাতীয় ক্রিকেট দলের অতীত ও বর্তমান খেলোয়াড়!
উত্তর ১০০ ভাগ ঠিক। কিন্তু শুধু এ কারণেই এদের নাম এখানে উঠে আসেনি। আসলে এদের সবাই বের হয়েছেন বিকেএসপি থেকে। একইভাবে আমরা হকির মামুন-উর-রশীদ, জিমি, তুহিন, প্রিন্সের নাম বলতে পারি। পারি ফুটবলের হাসান আল মামুন, জাহিদ হোসেন এমিলি, মাসুদ রানার নাম। আর শুটিংয়ে সাফ ও কমনওয়েলথে সোনাজয়ী আসিফ হোসেন আর সাফের সোনাজয়ী শারমীনের নামও একই কারণে উচ্চারিত হবে। বাদ থাকবে না সাঁতারের কারার মিজানের নামও। তাহলে? তাহলে এই যে লেখাটি তৈরি হচ্ছে, তা বিকেএসপি নামে খেলোয়াড় তৈরির কারখানার গল্প বলার জন্যই তৈরি হচ্ছে, এ কথা বুঝতে হবে। চলুন ঘুরে আসি সেখান থেকে। ঘড়ির কাঁটাটা সবে ভোর ছয়টার ঘর ছুঁয়েছে। কাঁটাটা ছয়-এর ঘর ছোঁয়ামাত্রই সুমধুর সুরে বাঁচতে থাকে কলবেল। কিন্তু তা বিরক্তি ধরায় না ঘুমিয়ে থাকা শারমিন আক্তার, আযরা রেহানা, সালমান সাদিক, আশিক মাহমুদদের মনে। কারণ গভীর ঘুমের মধ্যেও এই কলবেলের প্রতীক্ষায় থাকে ওরা। কখন হবে ভোর আর কখনোই বা প্র্যাকটিস ড্রেস পরে হাতে তীর-ধনুক, বাস্কেটবল, হকিস্টিক, ব্যাডমিন্টন, ফুটবল প্রভৃতি খেলার সরঞ্জাম নিয়ে দৌড়ে যাবে মাঠ, পুল, বক্সিং রেঞ্জ নয় তো বা সিনথেটিক ট্র্যাকে। সাদা, লাল, সবুজ, ছাইসহ আরও বর্ণিল রঙের প্র্যাকটিসের পোশাক পরে মুখরিত করে রাখবে বিকেএসপির প্রাঙ্গণ। এভাবেই ওদের কলকাকলীতে জেগে ওঠে বিকেএসপির প্রতিটি সকাল। আর এভাবেই খেলতে খেলতে পড়াশোনা চলে বাংলাদেশের একমাত্র সরকারি ক্রীড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিকেএসপিতে। সাধারণত যাদের খেলাধুলার প্রতি আগ্রহ ও খেলাধুলায় নিজের ক্যারিয়ার গড়তে আগ্রহী, তাদের জন্য বিকেএসপি আদর্শ স্থান।
ঢাকা থেকে নন্দন পার্ক যাওয়ার রাস্তায় সাভারের জিরানীতে ১৫০ একর জমির ওপর সবুজ ছায়ায় প্রাকৃতিক পরিবেশে গড়ে উঠেছে বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান (বিকেএসপি)। ১৯৮৬ সাল থেকে নিয়মিত খেলাধুলার ওপর প্রশিক্ষণের পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক পড়ালেখার ব্যবস্থা চালু করা হয় এখানে। বর্তমানে ৩৫ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা ও ৩২ জন কোচের তত্ত্বাবধানে ৪৭৬ জন ছাত্রছাত্রী পড়াশোনা করছে। প্রতিটি শিক্ষার্থীর থাকার জন্য রয়েছে আবাসিক ব্যবস্থা। ক্যাম্পাসের ভেতরেই রয়েছে ছেলে ও মেয়েদের জন্য দুটি আলাদা হোস্টেল। হাউসসুপারেরা শিক্ষার্থীদের সার্বক্ষণিক দেখাশোনা করেন। সকাল সাড়ে ছয়টা থেকে নয়টা ও বিকেল তিনটা থেকে পাঁচটা পর্যন্ত দুটি সেশনে চলে খেলাধুলার প্রশিক্ষণ। তাই বলে ভাববেন না যে এখানে শুধু সারা দিন খেলাধুলা চলে। সকাল সাড়ে নয়টা থেকে দেড়টা এবং সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত একাডেমিক ভবনগুলোয় চলে প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়া। বিকেএসপির মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার মোহাম্মদ শওকত হোসেন জানান, বিকেএসপিতে মূলত খেলাধুলাকে প্রাধান্য দেওয়া হলেও প্রাতিষ্ঠানিক পড়ালেখায় কোনো অংশেই পিছিয়ে নেই এখানকার শিক্ষার্থীরা। এসএসসি ও এইচএসসিতে ভালো ফলের পাশাপাশি ডিগ্রি (পাস কোর্স) ২০০৯-এ বাংলাদেশে প্রথম হয় এখানকার ছাত্রছাত্রীরা। এ ছাড়া খেলাধুলা যে পড়ালেখার জন্য বাধা হয়ে দাঁড়ায় না, তারই উদাহরণ হলো এখানকার ছাত্র জাতীয় দলের ক্রিকেটার মুশফিকুর রহিম। গত বছর এসএসসি পরীক্ষায় মানবিক বিভাগ থেকে জিপিএ ফাইভ পায় সে। শুধু পড়ালেখা আর খেলাধুলায় নয়, বিকেএসপিতে চলে নাচ, গান, আবৃত্তি, বিতর্ক ও সাংস্কৃতিক সহশিক্ষা কার্যক্রম।
ঘুরে দেখা যাক পুরো বিকেএসপি
বাস থেকে নেমে বিকেএসপির প্রধান ফটকের দিকে যেতেই বিভিন্ন খেলাধুলার মুরাল স্বাগত জানাবে আপনাকে। মূল ফটক পার হতেই ভেতরে রয়েছে প্রধান কার্যালয়, ক্রিকেট মাঠ, সুইমিংপুল, জিমনেশিয়াম, সিনথেটিক ট্র্যাক, শুটিং কমপ্লেক্স, কলেজ ভবন, স্কুল ভবন, ছাত্র হোস্টেল, ট্রেনিং হোস্টেল, গেস্ট হোস্টেল, বক্সিং রেঞ্জ, হকির মাঠ, আর্চারির মাঠ, টেনিস কমপ্লেক্স, বাস্কেটবল গ্রাউন্ড। প্রতিটি স্থাপনাই সাজানো হয়েছে ছবির মতো করে। শুধু বাইরে নয়, স্কুল-কলেজের কক্ষগুলোও পরিপাটিভাবে সাজানো। আবাসিক হোস্টেল বলতে আমাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে ছোট্ট একটি কক্ষ। এই কক্ষে নোংরা পরিবেশে গাদাগাদি করে থাকছে সাত আটজন মানুষ; কিন্তু বিকেএসপির হোস্টেলের কক্ষগুলো সেই চিরাচরিত চেহারাই পাল্টে দিয়েছে। কেমন লাগে হোস্টেল জীবন? আয়েশা সিদ্দিকা, সোহেলা আক্তার, রাকিবুজ্জামান, রামকৃষ্ণ আচার্য্য, জুহি চাকমার কথায় বোঝা যায়, অনেক আনন্দেই তারা দিন কাটায় এখানে। তারা জানায়, রাত ১০টার পর যখন হাউসগুলোর সব বাতি নিভিয়ে দেওয়া হয়, তখনই শুরু হয় তাদের আসল মজা। অন্ধকারে ঘরের ভেতর লুকোচুরি, কানামাছি খেলে ওরা। কম্বল সিটিং বিকেএসপির তালিকাভুক্ত খেলা না হলেও (হোস্টেলে) হাউসগুলোর ভেতর জনপ্রিয় খেলা। কম্বল সিটিং? সেটা আবার কী ধরনের খেলা—জিজ্ঞেস করলে আয়েশা সিদ্দিকা জানায়, কম্বলের ভেতর একজনকে ঢুকিয়ে বাকিরা তার ওপর মজা করে কিল, ঘুষি দেয় এবং তাকে কোনোভাবেই বের হওয়ার সুযোগ দেওয়া হয় না। জিজ্ঞেস করি, এতে করে যাকে ঢোকানো হয় কম্বলের নিচে, সে রেগে যায় না? এটা তো একটা খেলা। রাগ করবে কেন? —জানায় আয়েশা। ওদের হাউসগুলোয় খাওয়ার মেন্যু খুবই ভালো। কখনো তা বাড়ির রান্না করা খাবারকেও হার মানায়। কী কী থাকে মেন্যুতে, জিজ্ঞেস করলে আশিক মাহমুদ জানায় (সবার পক্ষ থেকে), সকালে থাকে ডিম, স্যুপ, রুটি বা পরোটা, সবজি, ফল, জুস; দুপুরে ভাত, মাছ, মাংস, ডাল, সবজি ভর্তা ও সন্ধ্যায় ভাত, মাছ বা মাংসের তরকারি, ডাল, সবজি এবং রাত নয়টায় মিল্ক ব্রেকে দুধ/হরলিকস/কফি, কেক/বিস্কুট, চিপস, ফল। প্রতিবারই ডাইনিংয়ে বুফে সার্ভিসে খাবার পরিবেশন করা হয়। জানায় আশিক। হাউসে গল্প করতে করতেই বিকেলে প্রশিক্ষণের সময় হয়ে যায়। ওদের সঙ্গে যাই। আর্চারি, অ্যাথলেটিকস, বক্সিং, ক্রিকেট, জিমন্যাস্টিক, জুডো, শুটিং, সুইমিং, বাক্সেটবল, ফুটবল, হকি, টেনিস বিকেএসপিতে এই তালিকাভুক্ত ১২টি খেলার সব কয়টিতে ছেলেদের অংশ নেওয়ার সুযোগ থাকলেও শেষের চারটিতে মেয়েদের অংশ নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। প্র্যাকটিস সেশনে চলে নিবিড় অনুশীলন। সেখানেই ব্যাট হাতে দাঁড়িয়ে থাকা ক্রিকেটার সুপ্তা রহমানের কাছে জানতে চাই, এত খেলা থাকতে ক্রিকেটকে বেছে নেওয়া কেন। সুপ্তা জানায়, সে এক দিন সেরা মহিলা অলরাউন্ডার (ক্রিকেটার) হয়ে বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশের নাম তুলে ধরতে চায়। সব প্র্যাকটিস ইভেন্ট ঘুরে আর্চারি মাঠে আসি। সারিবদ্ধভাবে তীরধনুক হাতে ছেলেরা দাঁড়িয়ে যখন নির্দিষ্ট বোর্ডে লক্ষ্যভেদ করে, তখন মনে পড়ে মহাভারতের স্বয়ংবর সভার কথা। প্রতিটি খেলায় ছেলেমেয়েদের একসঙ্গেই চলে প্র্যাকটিস সেশন। এত নিয়মের বেড়াজাল, নিশ্চয়ই বাড়ির কথা মনে পড়ে সবার? হকির কোচ এক সময় এখানকার ছাত্র তবির-ই-নূর জানান, এত নিয়মের মধ্যেও এখানে সহপাঠীদের মধ্যে গড়ে ওঠে হূদ্যতা। আর খেলার প্রতি যাদের রয়েছে অদম্য টান, তারাই কেবল পড়তে আসে বিকেএসপিতে। এ কারণে বিকেএসপির সঙ্গে গড়ে ওঠে তাদের আত্মার বন্ধন। সেই বন্ধন ছিন্ন করা খুবই কঠিন। কারণ আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতা বিষয়ে পড়ালেখা করেও বিকেএসপির মায়া ছাড়তে না পেরে আবার এখানেই ফিরে এসেছি কোচ হয়ে। শিক্ষার্থীরা স্বপ্ন দেখে এক দিন বিকেএসপির গর্বিত সন্তান হয়ে দেশের নাম আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিয়ে যাবে। তাই ওরা ঘুমের মধ্যেও সজাগ রাখে ওদের শ্রবণশক্তি, কখন বাজবে সেই প্রতীক্ষিত কলবেলটা। সেই ধ্বনি শুনেই ওরা দৌড়ে যাবে প্র্যাকটিস গ্রাউন্ডে, কঠোর অনুশীলনে।
জেনে নেওয়া যাক বিকেএসপিতে ভর্তি হওয়ার নিয়ম
বিকেএসপির মূল উদ্দেশ্য হলো বয়সভিত্তিক ক্রীড়া মেধাসম্পন্ন খেলোয়াড়দের দীর্ঘমেয়াদি বিজ্ঞানভিত্তিক ক্রীড়া প্রশিক্ষণসহ সাধারণ শিক্ষা দেওয়ার মাধ্যমে শিক্ষিত খেলোয়াড় তৈরি করা। সাধারণত যারা এখানে ভর্তি হতে চায়, তাদের খেলাধুলায় প্রতিভাবান, শারীরিক ও মানসিক সক্ষমতা এবং বয়সভিত্তিক শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকতে হবে। ফেব্রুয়ারি মাসে পত্রিকায় দেওয়া বিজ্ঞাপন অনুযায়ী জীবনবৃত্তান্ত, বর্তমান ঠিকানা ও চার কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবিসহ লিখিত আবেদন বিকেএসপির মহাপরিচালকের বরাবর পাঠাতে হবে। এরপর বিকেএসপির প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে নির্দিষ্ট দিনে প্রশিক্ষণার্থীদের চূড়ান্ত ভর্তির জন্য বাছাই করা হবে। মহাপরিচালকের কাছে যাদের আবেদন গ্রহণযোগ্য হবে, তাদের সঙ্গে বিকেএসপির পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হবে। ১০ বছর বয়সী ছেলেমেয়েদের বিকেএসপিতে ভর্তি করা হয়। পড়ালেখার সম্পূর্ণ ব্যয় নির্ভর করে অভিভাবকের আয়ের ওপর।

Wednesday, February 16, 2011

প্রাথমিক বৃত্তির ফল প্রকাশ

এ বছর প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় সাফল্য পেয়েছে ৫৪ হাজার ৬৭৩ জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে ২১ হাজার ৯৯৩ জন ট্যালেন্টপুলে ও ৩২ হাজার ৬৮০ জন সাধারণ বৃত্তি পেয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে সংবাদ সম্মেলনে ২০১০ সালের প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষার ফল ঘোষণা করেন এই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আফছারুল আমীন। এ সময় প্রতিমন্ত্রী মো. মোতাহার হোসেন, সচিব এ কে এম আবদুল আউয়াল মজুমদার, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শ্যামল কান্তি ঘোষসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বৃত্তির ফল প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে (www.dpe.gov.bd) পাওয়া যাচ্ছে। প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা ২০১০-এর ফলাফলের ভিত্তিতে বৃত্তি পাওয়া শিক্ষার্থীদের তালিকা করা হয়েছে। গত বছরের ২৮ ডিসেম্বর সমাপনী পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বিভাগওয়ারি বৃত্তি পেয়েছে—রাজশাহী বিভাগে ট্যালেন্টপুলে দুই হাজার ৮৫৩ ও সাধারণ কোটায় চার হাজার ৯০৪; রংপুর বিভাগে ট্যালেন্টপুলে দুই হাজার ৭১৬ ও সাধারণ কোটায় তিন হাজার ৪৬০; খুলনা বিভাগে ট্যালেন্টপুলে দুই হাজার ২৯৬ ও সাধারণ কোটায় তিন হাজার ৯৪৪; ঢাকা বিভাগে ট্যালেন্টপুলে সাত হাজার ৮৭ ও সাধারণ কোটায় নয় হাজার ৪৮; চট্টগ্রাম বিভাগে ট্যালেন্টপুলে চার হাজার ৩৮১ ও সাধারণ কোটায় ছয় হাজার ৬১২; বরিশাল বিভাগে ট্যালেন্টপুলে এক হাজার ২০৬ ও সাধারণ কোটায় দুই হাজার ৪৭২ এবং সিলেট বিভাগে ট্যালেন্টপুলে এক হাজার ৪৫৪ ও সাধারণ কোটায় দুই হাজার ২২৪ জন শিক্ষার্থী বৃত্তি পেয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পাওয়া শিক্ষার্থীরা মাসিক ২০০ ও সাধারণ কোটায় বৃত্তি পাওয়া শিক্ষার্থীরা মাসিক ১৫০ টাকা করে পাবে। এ ছাড়াও প্রতিবছর এককালীন ১৫০ টাকা করে পাবে। এই বৃত্তির মেয়াদ হবে পরবর্তী তিন বছর (অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত) পর্যন্ত। মন্ত্রী বলেন, মোট ৫৫ হাজার শিক্ষার্থীকে বৃত্তি দেওয়ার কথা থাকলেও হিসাব-নিকাশ করে কিছু কম দেওয়া হয়েছে।

Monday, February 14, 2011

তোমার চোখ এতো লাল কেন?


আমি বলি না আমাকে ভালোবাসতেই হবে
আমি শুধু বলি কেউ একজন শুধু একবার
আমার ঘরের ভেতর থেকে দরজার সিটকিনিটা খোলে দিক
ঘরের বাইরে থেকে দরজার সিটকিনি খুলতে খুলতে
আমি এখন বড্ড বেশি ক্লান্ত  

আমি বলি না আমাকে ভালোবাসতেই হবে
এঁটো বাসন, জামা কাপড় এগুলো আমি নিজেই ধুতে পারি
আমি শুধু বলি পাটশাক ভাঁজা দিয়ে গরম ভাত খাবার সময়
কেউ একজন শুধু একবার আমাকে জিজ্ঞেস করুক
আমার আরও একটি কাচা লংকা লাগবে কি না?

আমি বলি না আমাকে ভালোবাসতেই হবে
আমি শুধু বলি কেউ একজন শুধু একবার
আমাকে জিজ্ঞেস করুক
তোমার চোখ এতো লাল কেন?

Wednesday, February 2, 2011

শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার ফল প্রকাশ


সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগের লিখিত পরীক্ষার ফল গত সোমবার প্রকাশ করা হয়েছে এতে পাঁচ হাজার ৬৭০ জন শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয়েছেন ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে জাতীয় শিক্ষাব্যবস্থা একাডেমিতে (নায়েম) উত্তীর্ণ প্রার্থীদের মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে
মাধ্যমিক উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (কলেজ প্রশাসন) অধ্যাপক দীপক কুমার নাগ গতকাল প্রথম আলোকে জানান, শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং মাধ্যমিক উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে (www.moedu.gov.bd, www.dshe.gov.bd) ফল পাওয়া যাবে পাশাপাশি টেলিটক মোবাইল ফোনেও নির্ধারিত পদ্ধতিতে ফল জানা যাবে তিনি আরও জানান, এক হাজার ৯৬৮টি পদের জন্য এই পরীক্ষায় আবেদনকারী ছিলেন এক লাখ ৩২ হাজার ২৯৯ জন