কোনো জরিপের ফল নয়, একেবারে গবেষণাগার থেকে বিজ্ঞানীদের দেওয়া পাকা খবর—ম্যাথু রিচার্ডই পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ।
গাঁয়ের মোড়লের কঠিন ব্যামো হয়েছে। আশপাশের ১০ গাঁ খুঁজে বৈদ্য-কবিরাজ আনা হলো। কিন্তু কিছুতেই ভালো হলো না মোড়ল। দিন যত গড়ায় মোড়লের শরীর তত শীর্ণকায় হয়ে পড়ে। শেষে নিদান এল, রাজ্যের সবচেয়ে সুখী মানুষটির গায়ের জামা এনে পরালে ভালো হবে মোড়ল। চারদিকে লোকলস্কর পাঠানো হলো সুখী মানুষের খোঁজে।
যাকেই জিজ্ঞেস করা হয় জবাবে বলে, সে সুখী নয়। শেষে সুখী মানুষের সন্ধান মিলল। মানুষটি একজন কাঠুরে। থাকে বনের ধারে ছোট্ট একটি কুঁড়েতে। মোড়লের লোক সুখী মানুষের কাছে একটি জামা চাইল। সুখী মানুষের সাফ জবাব, জামা দেওয়া যাবে না। মোড়লের লোক তো অবাক। বলে কী এই লোক! সামান্য একখানা জামা কতই বা এর দাম! তাও দিতে চায় না লোকটা। সুখী মানুষ হেসে বলে, তার তো জামাই নেই। দেবে কোত্থেকে!
গাঁয়ের মোড়লের কঠিন ব্যামো হয়েছে। আশপাশের ১০ গাঁ খুঁজে বৈদ্য-কবিরাজ আনা হলো। কিন্তু কিছুতেই ভালো হলো না মোড়ল। দিন যত গড়ায় মোড়লের শরীর তত শীর্ণকায় হয়ে পড়ে। শেষে নিদান এল, রাজ্যের সবচেয়ে সুখী মানুষটির গায়ের জামা এনে পরালে ভালো হবে মোড়ল। চারদিকে লোকলস্কর পাঠানো হলো সুখী মানুষের খোঁজে।
যাকেই জিজ্ঞেস করা হয় জবাবে বলে, সে সুখী নয়। শেষে সুখী মানুষের সন্ধান মিলল। মানুষটি একজন কাঠুরে। থাকে বনের ধারে ছোট্ট একটি কুঁড়েতে। মোড়লের লোক সুখী মানুষের কাছে একটি জামা চাইল। সুখী মানুষের সাফ জবাব, জামা দেওয়া যাবে না। মোড়লের লোক তো অবাক। বলে কী এই লোক! সামান্য একখানা জামা কতই বা এর দাম! তাও দিতে চায় না লোকটা। সুখী মানুষ হেসে বলে, তার তো জামাই নেই। দেবে কোত্থেকে!
সুখ জিনিসটাই এমন। অগাধ বিত্ত-বৈভবের মালিক সুখ-সুখ করে মনে অসুখ বাঁধিয়ে ফেলল। কিন্তু সুখ তারে ধরা দেয় না। আর ঘরে দুই মুঠো অন্ন নেই, সেই মানুষ পরমানন্দে সকালের মিঠা রোদ গায়ে মেখে ঘুরছে। সত্যিকারের সুখ এমনই হয়। কৃত্রিমতাবর্জিত, সমাজ-সংসার, বস্তুজগৎ তার কাছে তুচ্ছ; মিছে মরীচিকা। সুখ কারও দেহে বা মস্তিষ্কে বাস করে না। এর স্থান মনের গহিন কোণে। যার ঝিলিক, আলোকচ্ছটা মানুষের মুখেও পড়ে। ম্যাথু রিচার্ডের কথাই ধরা যাক।
ঠোঁট দুটোতে সারাক্ষণ আন্তরিকতা মাখা একটা হাসি ঝুলে থাকে। গাঢ় একটা প্রশান্তি যেন মুখজুড়ে খেলা করে। চোখ দুটো সারল্যমাখা। ৬৪ বছর বয়সী এই ফরাসিকে বলা হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ। না, কোনো ধারণা বা জরিপের ফল নয় এটি। একেবারে গবেষণাগার থেকে বিজ্ঞানীদের দেওয়া পাকা খবর। ম্যাথু রিচার্ডই এ কালের সুখী মানব। রিচার্ড একাধারে একজন লেখক, আলোকচিত্রী, গবেষক, বৌদ্ধ সন্ন্যাসী ও অনুবাদক।
ঠোঁট দুটোতে সারাক্ষণ আন্তরিকতা মাখা একটা হাসি ঝুলে থাকে। গাঢ় একটা প্রশান্তি যেন মুখজুড়ে খেলা করে। চোখ দুটো সারল্যমাখা। ৬৪ বছর বয়সী এই ফরাসিকে বলা হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ। না, কোনো ধারণা বা জরিপের ফল নয় এটি। একেবারে গবেষণাগার থেকে বিজ্ঞানীদের দেওয়া পাকা খবর। ম্যাথু রিচার্ডই এ কালের সুখী মানব। রিচার্ড একাধারে একজন লেখক, আলোকচিত্রী, গবেষক, বৌদ্ধ সন্ন্যাসী ও অনুবাদক।
সুখী মানবের খেতাব পাওয়ার আগে রিচার্ডকে কতগুলো বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। সে ২০০৪ সালের কথা। গবেষকেরা তাঁর মাথায় ২৫৬টি ইলেকট্রোডস (বিদ্যুৎ পরিবাহী তার) বসান। যার মাধ্যমে মস্তিষ্কের গতিবিধি কম্পিউটারের পর্দায় ধরা পড়ে। একই পরীক্ষায় আরও কয়েকজন বৌদ্ধ সন্ন্যাসী অংশ নিয়েছিলেন। মেডিটেশন বা ধ্যান করার সময় সন্ন্যাসীদের মস্তিষ্কের গতিবিধি লক্ষ করেন গবেষকেরা। দেখা যায়, শুধু রিচার্ডের মস্তিষ্কের একটি অংশ বিশেষভাবে সক্রিয় হয়ে উঠছে। মস্তিষ্কের যে অংশ সুখের মতো ইতিবাচক আবেগগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করে রিচার্ডের মস্তিষ্কের সেই অংশটুকুর নড়াচড়া চোখে পড়ার মতো।
গবেষকেরা বলেন, ৩৫ বছর ধরে ধ্যান করার ফলে রিচার্ড নিজের মন ও মস্তিষ্ককে এখন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম। ধ্যান করে মস্তিষ্কের বিশেষ ওই অংশ উজ্জীবিত করে তুলেন রিচার্ড, যা থেকে তিনি দেহমনে এক অনাবিল প্রশান্তি খুঁজে পান।
২০০৭ সালে রিচার্ডের লেখা একটি বই সর্বাধিক বিক্রির তালিকায় উঠে আসে। বইটির নাম হ্যাপিনেস: এ গাইড টু ডেভেলপিং লাইফস মোস্ট ইম্পর্ট্যান্ট স্কিল। এতে রিচার্ড সুখের বর্ণনা দিয়েছেন এভাবে, ‘সুন্দর একটি মন থেকে উঠে আসা গভীর অনুভূতিই হচ্ছে সুখ।’
২০০৭ সালে রিচার্ডের লেখা একটি বই সর্বাধিক বিক্রির তালিকায় উঠে আসে। বইটির নাম হ্যাপিনেস: এ গাইড টু ডেভেলপিং লাইফস মোস্ট ইম্পর্ট্যান্ট স্কিল। এতে রিচার্ড সুখের বর্ণনা দিয়েছেন এভাবে, ‘সুন্দর একটি মন থেকে উঠে আসা গভীর অনুভূতিই হচ্ছে সুখ।’
সুখী মানুষের খেতাব পেয়ে নিজেকে নিজের মাঝে সীমাবদ্ধ রাখেননি রিচার্ড। পৃথিবীর যে প্রান্তেই গেছেন, সেখানেই শান্তি, সুখের বার্তা পৌঁছে দিয়েছেন। ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে লোকজনের সামনে বক্তৃতা করেছেন। রিচার্ডের মতে, বাহ্য জগতের কোনো বস্তুর ওপর নির্ভর না করে, অন্তরের অন্তস্তলের দিকে তাকাও। তাহলেই সুখ খুঁজে পাবে। 
তার মানে দাঁড়াচ্ছে, সবার মাঝেই সুখ গ্রহণের ক্ষমতা আছে। ইচ্ছে করলে যে কেউ নিজেকে, নিজের মনকে নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে সুখী হতে পারেন। ম্যাথু রিচার্ড অন্তত তা-ই মনে করেন। তাঁর মতে, শরীর সুস্থ রাখতে, ত্বক সুন্দর রাখতে আমরা হররোজ কত না সাধনা করি। ব্যায়াম, খাদ্যাভ্যাস থেকে শুরু করে ওষুধপত্র গ্রহণ চেষ্টার কমতি নেই আমাদের। শরীরের প্রতি আমরা এত যত্নবান, অথচ মনের দিকে নজর দিই না। ধ্যানের মধ্য দিয়ে মনের সেই সুস্থতা পাওয়া যাবে। তবে মেডিটেশন বা ধ্যান মানে এই নয়, কয়েক মুহূর্ত আমগাছের তলায় বসলাম, আর মনটাকে শূন্য করে দিলাম। ব্যস, হয়ে গেল! না, ধৈর্য ধরতে হবে। রোজ আধঘণ্টা করে ধ্যান করতে হবে। তাও কয়েক মাস চালিয়ে যেতে হবে। তা হলেই কাঙ্ক্ষিত ফল মিলবে।
রিচার্ড বলেছেন, ‘ইচ্ছা করলেই পছন্দমতো দুনিয়াটাকে বদলে দিতে পারি না আমরা। কিন্তু আমরা আমাদের মনটাকে বদলাতে পারি। মনকে বদলাতে পারলে আমাদের নিজস্ব পৃথিবীটাও বদলে যাবে।’
রিচার্ড বলেছেন, ‘ইচ্ছা করলেই পছন্দমতো দুনিয়াটাকে বদলে দিতে পারি না আমরা। কিন্তু আমরা আমাদের মনটাকে বদলাতে পারি। মনকে বদলাতে পারলে আমাদের নিজস্ব পৃথিবীটাও বদলে যাবে।’
তবে সুখী হওয়ার পথে কিছু অন্তরায় আছে। যেমন আত্মম্ভরিতা, আত্মকেন্দ্রিকতা। এসব যার মধ্যে আছে ওই মানুষের পক্ষে সুখ নামক সোনার হরিণটি খুঁজে পাওয়া মুশকিল। তাই নিজেকে জাহির করার প্রবণতা কমাতে হবে। অন্যের প্রতি সমবেদনা, সহমর্মিতা বাড়াতে হবে। উদার হতে হবে, মানুষকে নিঃশর্তভাবে ভালোবাসতে হবে। তবেই একদিন সুখী মানুষের জামাটি আপনার গায়ে চড়বে।
 
No comments:
Post a Comment